প্রতিটা দেশেই স্বাধীনতা দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পালিত হয়। এর কারণ হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জন করতে প্রতিটা দেশকেই অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছিল আর এই ত্যাগের মাধ্যমেএ তারা তাদের স্বাধীনতাকে কাছের করে পেয়েছে। এই স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেককেই বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
তো যারা যারা স্বাধীনতা দিবসে বক্তব্য দিতে চান তাদের জন্য আমরা একটি সুন্দর ও চমৎকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য নিয়ে আজকের এই পোস্ট সাজিয়েছি। নিচে সুন্দরভাবে আপনাদেরকে উত্তম বক্তব্যটি প্রদান করা হলো।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথযাত্রা শুরু করে। এই দিনটি আমাদের মনে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, আমাদের জাতীয় জীবনে এক গর্বময় অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেলেও আমরা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হতে পারিনি। পাকিস্তানের শাসন আমাদের উপর নতুন এক শোষণের দায় চাপায়। বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তানের শাসনকর্তারা জুলুম, অত্যাচার, বৈষম্য আর শোষণের নিপীড়ন চালায়। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অধিকারের উপর প্রতিনিয়ত হামলা চালানো হয়। এই বৈষম্যমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ আরও অনেক নাম না জানা বীর।
ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় চেতনার জাগরণ ঘটায় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দাবিগুলোর মধ্যে ছিল প্রদেশগুলির স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমতার প্রশ্ন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তা মেনে নিতে নারাজ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি আরও সংগঠিত হতে থাকে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্মম আক্রমণ চালায়। এই বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিরোধে নামেন। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর থেকে শুরু হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি ১৬ই ডিসেম্বর। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হন এবং দুই লক্ষেরও বেশি নারী তাদের সম্মান হারান। এ দেশের মানুষ ত্যাগ স্বীকার করে যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা অর্জন শুধু একটি দেশের নয়, একটি জাতির আত্মপরিচয়েরও।
স্বাধীনতা দিবস আমাদের জন্য শুধু একটি স্মৃতিচারণ নয়, এটি আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্বেরও একটি স্মারক। আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি, কিন্তু সেই স্বাধীনতার সুফল পেতে হলে আমাদেরকে সততার সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য, সমাজের প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক পথ অতিক্রম করেছে। আজ আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি করেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি সহ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দরিদ্রতা, বেকারত্ব, সামাজিক বৈষম্য এবং দুর্নীতি রোধে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে।
একটি জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই আসে যখন সে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন। সেই লক্ষ্য পূরণে আমাদের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং কর্মমুখী করতে হবে, যাতে আমাদের যুবসমাজ সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন করে সকল নাগরিকের জন্য সুলভ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষির আধুনিকায়ন ও শিল্পায়নকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে পারি।
স্বাধীনতা দিবস আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার দিন। তাদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা আমাদের প্রেরণা জোগায়। আজকের এই দিনে আমরা তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের আত্মত্যাগের মহিমা চিরস্মরণীয় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা এই দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মূল্য বুঝতে পারে এবং দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পথ ছিল খুবই কষ্টকর ও রক্তক্ষয়ী। আমরা একটি জাতি হিসেবে যে সংগ্রাম করেছি, তা আমাদের চেতনায় গেঁথে রয়েছে। তাই স্বাধীনতা দিবসে আমরা নতুন উদ্যমে আমাদের দেশ গঠনের শপথ নেই। আমরা নিজেদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ বা বিরোধ না রেখে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতা দিবস আমাদের জন্য সর্বদাই এক প্রেরণার উৎস। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি স্বাধীন জাতি। আমাদের এই স্বাধীনতা ধরে রাখতে হলে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
স্বাধীনতা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এই স্বাধীনতা আমাদের চেতনার উৎস, আমাদের পরিচয়ের ভিত্তি। স্বাধীনতার সংগ্রামে যে মহান বীরেরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। তাদের ত্যাগ ও সাহসিকতা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাবে।
আসুন, এই মহান দিনে আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি যে, আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সর্বদাই শ্রদ্ধা করবো, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবো এবং আমাদের জাতীয়তাবোধকে শক্তিশালী করবো। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।