আসসালামু আলাইকুম আপনি কি জান্নাতের কিছু ফুলের নাম এবং এই জান্নাতের ফুলের নামসমূহ জানতে চাচ্ছেন ?
যদি আপনি এই জান্নাতের কিছু ফুলের নাম অর্থ সহ জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেল অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন। এই পোস্টে আমরা পাঠকদেরকে একদম সহজ ভাষায় অর্থসহ জান্নাতের ফুলের নাম সমূহ বিস্তারিত বলে দেব।
জান্নাতে যে সমস্ত নেয়ামত দেওয়া হবে এবং জান্নাতবাসীদেরকে যেগুলো উপভোগ করতে দেওয়া হবে তার সাথে দুনিয়ায় কোন মিল পাওয়া যাবে না।
শুধুমাত্র দুনিয়ায় যারা কষ্ট করে চলবে এবং আল্লাহর আদেশগুলো মেনে চলবে এবং নিষেধগুলো পরিত্যাগ করবে তারাই একমাত্র এই জান্নাতের অংশীদার হতে পারবে।
যাইহোক, চলুন তাহলে বেশি কথা না বাড়িয়ে এখন আমরা এই জান্নাতের কিছু ফুলের নাম সহ জান্নাতের ফুলগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা শুরু করে দেই।
জান্নাতের ফুল কেমন হবে?
মনে রাখবেন জান্নাতের মধ্যে আল্লাহতালা এমন কিছু নিয়ামত বানিয়ে রেখেছেন যেগুলো আমরা কখনো কল্পনা করিনি। প্রতিটা জান্নাতি ব্যক্তি সবসময় থাকবে অনেক বেশি সুখ এবং শান্তির মধ্যে।
জান্নাতের মধ্যে মানুষের কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না । এই জান্নাতবাসিরা কোনদিন অসুস্থ হবে না কিংবা তাদের বয়স কখনো বাড়বে না।
এছাড়াও জান্নাতের মধ্যে এমন কিছু নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে রেখেছেন যেগুলো দেখে জান্নাতীরা নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারবে না।
দুনিয়ায় যারা সৎকর্ম করবে এবং সঠিকভাবে সবকিছু মেনে চলবে তারাই একমাত্র এই জান্নাত লাভ করতে পারবে । আল্লাহতালা এটাই তার কোরআন মাজীদে সঠিকভাবে স্পষ্ট করে বলেছেন।
যাই হোক জান্নাতের মধ্যে যে সমস্ত ফুল থাকবে সেগুলোর সাথে দুনিয়ায় কোন ফুলের তুলনা হবে না। দুনিয়ার বাগানে ফুল সব সময় ফোটে না নির্দিষ্ট একটি মৌসুমে এই ফুলগুলো ফুটে থাকে।
কিন্তু জান্নাতের মধ্যে এই ধরনের কোন নির্দিষ্ট মৌসুম থাকবে না সেখানে সব সময়ের জন্য ফুল ফুটতে থাকবে।
দুনিয়ার ফুল গুলোর সুবাস যদিও সুন্দর কিন্তু জান্নাতের মধ্যে যে সমস্ত ফুল থাকবে সেগুলোর সুবাস হবে এর থেকে হাজার লক্ষ গুণ বেশি সুগন্ধযুক্ত।
দুনিয়ার মধ্যে থাকা ফুলগুলোর সুবাস এক সময় শেষ হয়ে যায় এবং সেই ফুলে আর সুবাস থাকে না। কিন্তু জান্নাতে যে ফুল একবার ফুটবে তার সুবাস আজীবন থাকবে এবং এই সুবাস দিন দিন বাড়তে থাকবে কখনো কমবে না।
এছাড়াও একটা সময় পর দেখা যায় দুনিয়ায় ফোটা ফুল গুলো নেতিয়ে পরে এবং শুকিয়ে যায়। কিন্তু জান্নাতের মধ্যে এই ফুলগুলো কোনদিন শুকিয়ে যাবে না। সবসময় এগুলো জান্নাতবাসীদেরকে সুগন্ধ প্রদান করা যাবে।
বিভিন্ন বর্ননায় পাওয়া যায় যে জান্নাতের একটি ফুলের কোন পাপড়ি যদি পৃথিবীর কোন জায়গায় ফেলা হতো তাহলে পৃথিবী পুরোটাই সুগন্ধে ভরে যেত এবং এই সুগন্ধ কোনদিন শেষ হতো না।
সেখানে থাকবে হরেক রকমের ফুল এবং ফুলের গাছ । আর এই প্রতিটি ফুলের সুগন্ধ থাকবে অসম্ভব সুন্দর। ফুলগুলো সব সময় জান্নাতবাসীদের মনে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাদের সুগন্ধ গুলো সারাতে থাকবে।
ফুলগুলোর আকার এবং দৈর্ঘ্য হবে অনেক বড় আর জান্নাতবাসিরা যেমন চাইবে এই ফুলগুলো ঠিক তেমনভাবেই সেখানে থাকবে।
জান্নাতের মধ্যে যে সমস্ত বাগান থাকবে এই বাগানের মধ্যে এই ফুলগুলো থাকবে আর এই ফুলগুলো কখনো মরবে না কিংবা যে গাছ থেকে এই ফুল হয় সেই ফুলের গাছ ও কোনদিন নষ্ট হবে না।
জান্নাতের কিছু ফুলের নাম
এখন আমরা আমাদের আজকের এই পোষ্টের কাঙ্খিত বিষয় জান্নাতের কিছু ফুলের নাম গুলো অর্থসহ আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
মনে রাখবেন এই জান্নাতের ফুলের নাম সমূহ আমরা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এর সোর্স থেকে সংগ্রহ করেছি। এই কারণে এখানে যদি কোন ভুল হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
যদিও জান্নাত কেমন হবে এর আংশিক বর্ণনায় শুধুমাত্র আমরা কোরআন এবং হাদিস থেকে পেয়েছি। সঠিকভাবে জান্নাত এর ১০০% মিলে যায় এমন বর্ণনা কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না।
এই বিষয়টি আল্লাহতালা বারবার বলেছেন যে জান্নাতের সৌন্দর্য এমন হবে যা আমরা কখনো কল্পনা করতে পারবোনা। তবে কোরআন এবং হাদিস থেকে যে সমস্ত জান্নাতের কিছু ফুলের নাম পাওয়া গিয়েছে সেগুলোই নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. مناہل বা মিনাহিল
জান্নাতের ফুলের নাম সমূহ এর মধ্যে আমরা প্রথমে এই মিনাহিল নামের ফুলটি রেখে। এই মিনাহিল নামের ফুলটি পাওয়া যাবে জান্নাতে এবং এর সুগন্ধ হবে অত্যন্ত আকর্ষণে।
এর সুগন্ধির থাকে এটি দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হবে। কারণ এই মিনহিল শব্দের অর্থটি হচ্ছে বেহেস্তের সবথেকে সুন্দর একটি ফুল।
তাহলে বুঝতেই পারছেন ফুলটি কেমন সৌন্দর্য হবে। তবে হ্যাঁ দুনিয়ায় যে সমস্ত ফুল আছে এর সাথে কিন্তু জান্নাতের ফুল গুলোর কোন তুলনা করা যাবে না। কারণ জান্নাতের ফুলগুলো হবে এর থেকে হাজার কোটি লক্ষ গুণ বেশি সুন্দর।
জান্নাতের পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য এবং জান্নাতে বাসীদেরকে আনন্দ এবং শান্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা এই মিনাহীল নামক জান্নাতের ফুলটি বানিয়েছেন।
২. আরিজ বা اریج
এই আরিজ শব্দটি যদিও একটি মেয়ের নাম হিসেবে বর্ণনায় এসেছে। কিন্তু এই শব্দটি কে জান্নাতের ফুল হিসেবেও অনেক জায়গায় পাওয়া গিয়েছে।
আরিজ একটি মেয়ের নাম তবে এই শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে জান্নাতের সবথেকে সুগন্ধিযুক্ত ফুল। এখানে এই শব্দকে আরো অর্থ করতে গেলে বোঝা যাবে এটি কমলা গাছের ফুলের মতো সুগন্ধ যুক্ত একটি ফুলের নাম।
অর্থাৎ জান্নাতের মধ্যে এই ফুলটি হবে কমলা ফুলের মধ্যে সুগন্ধযুক্ত। তবে হ্যাঁ দুনিয়ার কমলা ফুলের থেকেও কিন্তু সেখানে অনেক গুণ বেশি আকর্ষণীয় সুগন্ধ থাকবে।
৩. افنان বা আফনান
এই আফনান ও একটি জান্নাতের বেশ সুন্দর ফুল। এই আফনান শব্দটিকে জান্নাতের ফুল হিসেবে পাওয়া গিয়েছে কোরআন মাজীদের মধ্যেও।
কুরআন মাজিদের সূরা আর রহমান এর ৪৮ নম্বর আয়াতের মধ্যে আমরা এই আফনান শব্দটিকে পেয়েছি। সেখানে এই আফনান শব্দটিকে জান্নাতের বিভিন্ন ফুলের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এছাড়াও এই আফনান শব্দটির শাব্দিক অর্থ করলে দাঁড়ায়: গাছের ডালপালা কিংবা ফুলের শাখা। তবে এই আয়াতে এটিকে জান্নাতের ফুলের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে।
এই কারণে আমরা জান্নাতের কিছু ফুলের নাম এর মধ্যে এই আফনান কেও রাখতে পারে।
৪. রেহান বা ریحان
এখানে রেহান শব্দটিকে পুরুষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর পবিত্র কোরআন থেকে এটিকে জান্নাতের ফুল হিসেবে প্রমাণ পাওয়া যায়।
পবিত্র কুরআন মাজীদের সূরা আর রহমান এর ১২ নম্বর আয়াত থেকে রেহান বা ড়াইহান শব্দকে আমরা পেয়েছি।
শব্দটিকে অনুবাদ করলে দাড়ায় এটি একটি ফুলের তোড়া। এছাড়াও এর আরো পারিভাষিক অনুবাদ করলে এটি সুগন্ধিযুক্ত ফুলের গাছ অর্থ হিসেবেও পাওয়া যায় ।
এখানে এই শব্দকে রেহানা হিসেবেও ব্যাবহার করা হয়। তখন এটি মেয়ে হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে এটিও জান্নাতের ফুলের নামের মধ্যে পড়বে।
৫. জুনাইরা বা জুনাইরাহ
জান্নাতের ফুলের নাম গুলোর মধ্যে যে সমস্ত শব্দ পাওয়া গেছে এর মধ্যে এই জুনাইরা শব্দটিও উল্লেখিত।
তবে এই শব্দটির অর্থ করলে এটি অর্থ হয় সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু জান্নাতের সুন্দর ফুল গুলার মধ্যে এটিও একটি।
৬. জারা অথবা জারাহ
বিভিন্ন ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ থেকে এই যারাহ শব্দটি কেউ জান্নাতের ফুল হিসেবে পাওয়া গিয়েছে। শব্দটি যদিও একটি মেয়ের নাম কিন্তু এর শাব্দিক অর্থ করলে দাঁড়ায়: ফুল ,নারী, ভদ্রমহিল বা রানি।
অর্থাৎ এই ফুলটি হবে অনেক ভদ্র এবং ফুলের রানীও হতে পারে। যদিও জান্নাতের ফুলগুলো সবগুলোই অনেক বেশি আকর্ষণীয় হবে তবে এটিও এমন একটি ভুল হবে যেটা জান্নাতের মধ্যে থাকবে ।
আর এই ফুলগুলো কখনো নষ্ট হবে না কিংবা ফুলের সুগন্ধ ও কখনো শেষ হয়ে যাবে না অর্থাৎ চিরকাল এই ফুলগুলো ফুটতে থাকবে এবং এদের সুগন্ধ বাড়তে থাকবে।
৭. মেনাল
এই শব্দটিকেও একটি মেয়ের নাম হিসেবেই বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে জান্নাতের সুগন্ধি যুক্ত ফুল গুলোর মধ্যে এই মিনাল নামক ফুলটি ও রয়েছে।
জান্নাতের মধ্যে যদিও অসংখ্য জাতের ফুল থাকবে কিন্তু এই মিনাল নামের ফুলটি হবে একটু বিশেষ জাতের ফুল
এর কারণ হচ্ছে মেনাল শব্দটির শাব্দিক অর্থ করলে দাঁড়াবে জান্নাতের একটি বিশেষ ফুল । তাই বুঝতেই পারছেন জান্নাতের বিশেষ ফুলগুলোর মধ্যে এই মেনাল ফুল টি হবে অন্যতম।
৮. এশাল
জান্নাতের কিছু ফুলের নাম এর মধ্যে এই এসাল শব্দটিও চলে আসবে। এর কারণ হচ্ছে এটিও একটি জান্নাতের বিশেষ ফুল হিসেবেই বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
যদিও এটি একটি ফরাসি শব্দ কিন্তু এটিও একটি জান্নাতের ফুলের নাম । আর এই জান্নাতে ফুলের নামের অর্থ হচ্ছে সুন্দর।
তাহলে বুঝতেই পারছেন জান্নাতে যে সমস্ত ফুল থাকবে তার মধ্যে অনেক বেশি সুন্দর হবে এই ইসাল নামক ফুলটি।
আরো কিছু জান্নাতের ফুলের নাম সমূহ
উপরে আমরা বেশ কিছু জান্নাতের ফুলের নাম গুলো আপনাদের সামনে আলোচনা করেছি। আমরা এই গুলগুলোর নামসহ সেখানে যে সমস্ত অর্থ আসবে এবং এই ফুলের গুণগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।
নিচে আরও বেশ কিছু ফুলের নাম আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
- রদব (Rudbab)
- কাফুর (Kafur)
- ইয়াসমীন (Yasmin)
- সাদা জারুল (White Jasmine)
- আল-আহাম (Al-A’ham)
- আল-কাওকাব (Al-Kawkab)
- আল-আসফরান (Al-Asfaran):
ইতিকথাঃ
আজকের এই ব্লগসাইট ২৪ ডট কম এর ছোট পোস্ট এর মাধ্যমে সবার সাথে আমরা জান্নাতের কিছু ফুলের নাম শেয়ার করেছি।
এখানে আমরা ফুলের নাম উল্লেখ্য করার পাশাপাশি এর অর্থস বিস্তারিত বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি আজকের এই পোস্ট পড়ে কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় কিংবা কোনোকিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আপনাদেরকে জানাবেন।