আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি জান্নাতের পাখির নাম গুলো জানতে চাচ্ছেন ? যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আজকের এই পোস্ট শুধুমাত্র আপনার জন্যই লেখা হয়েছে।
বন্ধুরা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে পাঠকদের কে আমরা জান্নাতের পাখির নাম জানিয়ে দেবো এবং এই জান্নাতের পাখি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।
জান্নাতের পাখি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
জান্নাতের পাখির নাম গুলো জানার আগে আপনাকে অবশ্যই এই জান্নাতের পাখি সম্পর্কে কোরআনের আয়াতগুলো জেনে নিতে হবে।
মনে রাখবেন জান্নাতের নিয়ামত গুলো সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন । যেহেতু দুনিয়ার সাথে সেই জান্নাতের কোন মিল পাওয়া যাবে না তাই সেখানকার সুখ এখানে বোঝাও সম্ভব নয়।
তো জান্নাতের পাখি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত থেকে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :
✓ পবিত্র কুরআনের সূরা আর রহমান এর ৭৯ নম্বর আয়াত থেকে এটা পাওয়া যায় যে, জান্নাতে থাকবে বিভিন্ন প্রজাতের এবং বিভিন্ন জাতের পাখি। এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে এবং জান্নাতে থাকবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ।
✓ সূরা আর রহমান এর ৫৫ নম্বর আয়াত থেকে জান্নাতে হুরদের সম্পর্ক বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। এখানে বলা হয়েছে জান্নাতে বিভিন্ন ধরনের হুর এবং কুরাতা থাকবে।
✓ সূরা আত তওবার ১১৯ নম্বর আয়াত থেকে এটা পাওয়া যায় যে , এবং এই জান্নাতে থাকবে আরো হুরুল আয়ন। এই হূরুল আয়ন কে বিভিন্ন জন জান্নাতের পাখি বলে সাব্যস্ত করেছেন।
জান্নাতের পাখি সম্পর্কে হাদিস
জান্নাত সম্পর্কে আমরা যে সমস্ত বর্ণনা জানি সেগুলো কিছুটা পাওয়া যায় কুরআনে এবং বাকিগুলো পাওয়া যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাদিস থেকে।
তো এই হাদিসে আরো অনেক জায়গায় জান্নাত সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া গেছে। তবে জান্নাতের পাখি সম্পর্কে যে সমস্ত হাদিসে পাওয়া যায় সেগুলো নিচ উল্লেখ করা হলো:
✓ বুখারী এবং মুসলিম এর একটি হাদিস থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ এর থেকে বর্ণিত , হযরত মুহাম্মদ সাঃ এরশাদ করেছেন: জান্নাতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু পাখি রেখেছেন যেগুলোর ডাক শুনে প্রতিটা জান্নাতি অনেক বেশি আনন্দিত হয়ে যাবে।
✓ বুখারী মুসলিম এর একই হাদিস থেকে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এটা বলেছেন যে এই পাখিগুলোর ডাক হবে যেন ঝর্ণার কলরব থেকে ভেসে আসা শব্দ।
এছাড়াও মুসলিম শরীফ থেকে আরো হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত আনাস রাঃ এর বর্ণনা থেকেও এই জান্নাতের পাখির নাম সম্পর্কে হাদিস পাওয়া গেছে।
✓ হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণনা পাওয়া যায় যে নবী করীম সাঃ বলেছেন , জান্নাতের মধ্যে আল্লাহ তালা এমন কিছু পাখি রেখেছেন তারা যখন ডাকবে তখন প্রতিটা জান্নাতবাসী অনেক বেশি মনে প্রশান্তি পাবে এবং আনন্দে মুগ্ধ হবেন।
জান্নাতের পাখিদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে ?
জান্নাত যেহেতু অনেক বেশি শান্তির একটি জায়গায় এখানে এত শান্তি পাওয়া যাবে যেটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। কি কারণে জান্নাতে প্রতিটা নিয়ামত এবং প্রতিটা বিষয় হবে খুব বেশি সুন্দর ।
জান্নাতে যে সমস্ত পাখি থাকবে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য গুলো সব থেকে ভালো এবং মধুর হবে। ছাড়াও জান্নাতের মধ্যে থাকা পাখিগুলোর সাথে দুনিয়ার কোন পাখির তুলনা হবে না।
দুনিয়ার পাখিগুলো ডাকলে আমরা অনেকেই বিরক্ত হয়ে যায় কারণ এই পাখিগুলো থেকে বিশ্রী রকমের আওয়াজ মাঝেমধ্যে আসে ।
কিন্তু জান্নাতের মধ্যে যে সমস্ত পাখি থাকবে সেগুলোর কণ্ঠ আল্লাহ তায়ালা এত বেশি সুন্দর করে দিবেন যে সেগুলো ডাকলে কেউ কখনো বিরক্ত হবে না।
জান্নাতের মধ্যে থাকা পাখি গুলো জান্নাত বাসীদেরকে গান শুনে মুগ্ধ করবেন। পাখিগুলোর কন্ঠ এত সুমধুর হবে যা দুনিয়ার কেউ কখনো শুনে নাই।
এছাড়াও জান্নাতে থাকবে অগণিত প্রজাতির পাখি। প্রতিটা প্রজাতির পাখি হবে খুব বেশি সুন্দর এবং দেখতে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আর এই জান্নাতের পাখিগুলো এত বেশি সুন্দর যে দুনিয়ার মানুষ তা কখনো কল্পনাও করেনি।
একেক প্রজাতির পাখি দেখতে এত বেশি সুন্দর হবে যে মনে হবে এটা থেকে ওটা বেশি সুন্দর ওটা থেকে এটা বেশি সুন্দর। এভাবে প্রতিটা প্রজাতির পাখি হবে খুব বেশি সুন্দর যা মানুষ দেখে নাই কখনো।
এছাড়াও জান্নাতের মধ্যে থাকা এই পাখিগুলোর জন্য জান্নাতের পরিবেশ হবে অনেক বেশি মনোরম। এই পাখিগুলো দেখেই জান্নাতবাসীরা মনে অনেক সুখ এবং প্রশান্তি পাবে।
এছাড়াও জান্নাতের পাখিদের অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকবে যে বৈশিষ্ট্য গুলোর কথা হয়তো আমরা এখন কল্পনাও করতে পারতেছি না ।
জান্নাতে থাকবে ছোট বড় মাঝারি সাইজের সব ধরনের পাখি। জান্নাতের পরিবেশ সুন্দর এবং মনোরম করার জন্য যা কিছু দরকার হবে সবকিছুই আল্লাহ তাআলা সেখানে ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
জান্নাতের পাখির নাম
পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে জান্নাত সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায়। জান্নাতে মুমিনদেরকে এমন সুখ শান্তিতে রাখা হবে যা তারা কখনো কল্পনা করেনি।
আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদেরকেই এই নিয়ামত গুলো দান করবেন। আর এই জান্নাতের মধ্যে জান্নাতের সৌন্দর্যকে আরো বহু গুণে বাড়িয়ে তোলার জন্য সেখানে আল্লাহ তায়ালা অনেক প্রাণীর ও ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
এই প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক প্রজাতির পাখি । যে পাখিগুলো দেখতে হবে অনেক বেশি সুন্দর এবং তাদের কন্ঠ হবে সব থেকে বেশি সুরেলো হলো এবং মনমুগ্ধকর।
তো যাই হোক যারা এতোক্ষণ জান্নাতের পাখির নাম জানতে ইচ্ছে করেছিলেন নিশা আপনাদের জন্য সুন্দর হবে জান্নাতের পাখির নাম গুলো তুলে ধরা হলো।
১. রয়হান
জান্নাতের মধ্যে অনেক ধরনের পাখি থাকবে তার মধ্যে এক পাখির নাম হবে রয়হান। এই পাখিটির বৈশিষ্ট্য হবে অনেক বেশি সুন্দর।
পাখিটির প্রধান কাজ থাকবে জান্নাতবাসীদের কে খাবার পরিবেশন করা। এই রয়হান প্রতিটা জান্নাতবাসি যখন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন সাথে সাথে সেটা নিয়ে গিয়ে হাজির হবে।
এছাড়াও এই পাখিগুলো ডালে বসে থাকবে এবং জান্নাতের পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
২. হুর
জান্নাতের হুর সম্পর্কে আমরা অনেক জায়গায় বিভিন্ন বর্ণনা পড়েছি। এই হুর গুলো সব সময় জান্নাতবাসিদের সেবা এবং শুশ্রূষা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
পড়তে পারেনঃ জান্নাতের হুরদের নাম | জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে?
এই হুর গুলো এত বেশি সুন্দর হবে যেটা অন্য কারো সাথে কখনো তুলনা করা সম্ভব নয়। আর এই হুরকে জান্নাতের পাখির সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
৩. হাওলা
জান্নাতের পাখির নাম এর মধ্যে আরেকটি রয়েছে হাওলা। এই হাওলা জান্নাতের সমস্ত নদীর মধ্যে সাঁতার কাটবে।
এছাড়াও এরা এমন সুরেল কন্ঠে ডাকবে যা শুনে প্রতিটা জান্নাতবাসীর মনে অনেক আনন্দ বৃদ্ধি পাবে।
৪. বুরুজ
বর্ণনায় পাওয়া যায় জান্নাতে থাকা এই বুরুজ নামের পাখিগুলো দেখতে হবে অনেক বেশি সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। এরা গাছের ডাল ডালে বসে থাকবে এবং পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
এছাড়াও এই পাখিগুলো অনেক সুমধুর কন্ঠে ডাকাডাকি করবে এবং গান গাইবে যা শুনে প্রতিটা জান্নাতবাসীর মন ভরে যাবে।
৫. কুরাতা
এই পাখিগুলো ও জান্নাতবাসীদের সেবা করা এবং আদেশ মেনে চলার কাজে ব্যস্ত থাকবে। তাছাড়া জান্নাতের মধ্যে যে মনোরম পরিবেশে হাওয়া বইতে থাকবে সেই হওয়ায় পাখিগুলো উড়তে থাকবে।
এই দৃশ্য দেখে প্রতিটা জান্নাতবাসী অনেক বেশি আনন্দিত হবে।
৬. হুরুল আয়ন
এই জান্নাতের পাখিটি সম্পর্কে আমরা আগেও আপনাদেরকে বলেছি। এই জান্নাতের পাখির নামটি বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনাতেও এসেছে।
হুরুল আয়ন নামের পাখিগুলো হবে দেখতে সবথেকে বেশি সুন্দর। এদেরকেও জান্নাত এ থাকা প্রতিটা মুমিন ব্যক্তিদের কে আনন্দ দেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
এদের চোখ গুলো হবে একদম নীল যা দেখে প্রতিটা জান্নাতি ব্যক্তিই খুব বেশি আনন্দ পাবেন।
পরিশেষে
আজকের এই পোস্টে আমরা পাঠকদের সাথে জান্নাতের পাখির নাম গুলো শেয়ার করার পাশাপাশি , এই জান্নাতের পাখি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
মনে রাখবেন জান্নাতে আল্লাহ তাআলা যা কিছুই বানিয়েছে সব তার মুমিন বান্দাদের জন্যই। তারা যেন সেখানে অনেক সুখ শান্তিতে থাকতে পারে তারই ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহ তায়ালা।
তো আমাদের আজকের এই পোস্ট পড়ে ভালো লাগলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারেন, আর এই জান্নাতের পাখি সম্পর্কে আরোও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।